মূল পাতা আন্তর্জাতিক ট্রাম্পের হুমকিকে তোয়াক্কা না করে গাজ্জাবাসী বলছে “আমাদের আর হারানোর কিছু নেই”
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 08 March, 2025 02:18 PM
ফিলিস্তিনের গাজ্জা উপত্যকাকে পরিণত করেছে মৃত্যুপুরিতে। চতুর্দিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ। তারপরও থেমে নেই ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল এবং তাদের মিত্র আমেরিকা। গাজ্জাবাসীকে আবারও হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তিনি বলেন, যদি মার্কিন জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে গাজ্জার সব বাসিন্দা মারা যাবে। তবে তার এই হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন না গাজ্জাবাসী। তারা বলছেন, আমাদের হারানো আর কিছুই নেই।
গাজ্জার ৫৯ বছর বয়সি এক ব্যবসায়ী ইয়াসির আল-শারাফা আল জাজিরাকে বলেন, আমি এসব হুমকিকে আর ভয় পাই না। কারণ গাজ্জার অনেক মানুষের মতো আমিও বিশ্বাস করি- আমার হারানোর কিছুই নেই।
তিনি বলেন, আগে পোশাক ব্যবসায়ী ছিলাম। আমার একটি বড় দোকান, ছয়তলা একটি ভবন, একটি গাড়ি এবং গাজ্জা সিটির তেল আল-হাওয়ায় স্টক রাখার জন্য গুদাম ছিল।
বছরের পর বছরের কঠোর পরিশ্রম এসব করেছিলাম। এখন সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, যুদ্ধ সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। যেদিকেই তাকাই, কেবল ধ্বংস, ধ্বংসাবশেষ আর দুর্দশা। আমাদের শোক করার মতো আর কিছু বাকি আছে কি? আমি এখন শিশুদের জন্য ক্যান্ডি ও স্ন্যাকস বিক্রি করি।
যুদ্ধের সময় দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর, আল-শারাফা ও তার পরিবার যুদ্ধবিরতি শুরু হলে উত্তরে ফিরে আসেন, কিন্তু সেখানে এসে দেখেন এক বিধ্বস্ত এলাকা, যেখানে জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব।
তিনি বলেন, যদি আমরা জিম্মিদের হস্তান্তর করি, তবুও কিছুই বদলাবে না। তারা নতুন অজুহাত তৈরি করে যে কোনো সময় যুদ্ধ আবার শুরু করতে পারে। আমরা পুরো বিশ্ব থেকেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি।
৬২ বছর বয়সি জামিলা মাহমুদ ট্রাম্পের কথাগুলো শোনেননি, তবে বৃহস্পতিবার সকালে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য এ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের হুমকিগুলো একটি মানসিক যুদ্ধের অংশ, যার উদ্দেশ্য গাজ্জার মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন, আমরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। না আছে ইন্টারনেট, না বিদ্যুৎ, না কোনো যোগাযোগের মাধ্যম। প্রতিবারই একটা নতুন পরিকল্পনা আসে– কখনো বলে গাজ্জার মানুষকে জোর করে সরিয়ে দেবে, কখনো বলে ইসরায়েল পুরো গাজ্জা দখল নেবে। আর এখন তারা পুরো গাজ্জার জনগণকে জিম্মিদের কারণে হুমকি দিচ্ছে।
জামিলা মাহমুদ নামে আরেক ফিলিস্তিনি জোর দিয়ে বলেন, যা কিছু ঘটুক না কেন, তিনি কখনোই গাজ্জা ছেড়ে যাবেন না। আমার বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও আমাকে সরাতে পারবে না।
আইমান আবু দাইয়েহ বলেন, আমরা ৫০ হাজার মানুষ হারিয়েছি। আমার দুই ছেলে মারা গেছে– একজন ২০২৩ সালের অক্টোবরে, আরেকজন ডিসেম্বর। তারা দুজনই তরুণ ছিল। আমার বাড়িটিও ধ্বংস হয়েছে। আমরা যথেষ্ট ক্ষতি ও দুর্ভোগ সহ্য করেছি। আমাদের বিষয়ে আরব দেশগুলো নীরব, ইউরোপের দেশগুলোও নীরব।
তিনি বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্যের কোনো মূল্য নেই। আমার মনে হয়, সে শুধু হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এসব হুমকি দিচ্ছে। তাদের যা করার বাকি, তা হলো আমাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।